-
- আমার দেশ, জীবনযাপন, সর্বশেষ সংবাদ>>
- ‘করোনায় মরে গেলে এখন আর ভাতের কষ্ট লাগতো না’
সময়ের বাতায়ন এডমিন দ্বারা প্রকাশিত
- প্রকাশিত>> মার্চ, ২১, ২০২৩, ৪:৫৪ অপরাহ্ণ
- 196 পড়া হয়েছে>>
তথ্য সংগ্রহ. দেওয়ান ইকবাল:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল অবস্থায় আছে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। করোনার আগে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করলেও, এখন দুর্বিষহ জীবন কাটছে তাদের। অনেকে হারিয়েছে কাজ। আবার আস্তে আস্তে কাজ পেলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। রোগশোকেও মিলছে না পর্যাপ্ত চিকিৎসা।
এমন একজন হলেন ফুল বানু। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে দাগনভূঞা উপজেলার পৌর ২নং ওয়ার্ড আজিজ ফাজিলপুরে ছোট একটা টিনশীট রুমে ভাড়া থাকেন। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে তার। দুদিন ধরে ঘরে চাল, তেল, নুন কিছুই নেই। হাতে কোনও টাকাপয়সাও নেই। আপাতত আশপাশের বাসা থেকে ধার করেই কাটছে দিন। করোনার পর থেকেই এমন টানাপোড়েন ফুল বানুর।
ফুল বানু বলেন, ‘করোনার আগেও জিনিসপত্রের দাম একটু কম ছিল। কিছুটা হিমশিম খেয়েও সংসার চালানো যেতো। এখন আর পারি না। চাল-ডাল থেকে শুরু করে তেল-নুন এমন কোনও জিনিস নেই যে দাম বাড়েনি। সবকিছুর দামই বাড়ছে, শুধু আমাদের মতো গরিবের বেতন বাড়েনি। মাছের বাজার, তরকারির বাজার সব বাজারে আগুন। আর সেই আগুনে আমরা পুড়ে ছাই হয়ে গেছি।’
দুপুরে খেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্ন করতেই কাপড়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘করোনায় মরে গেলে ভালো হতো। তাহলে এখন আর ভাতের কষ্ট করা লাগতো না।’
ফুল বানু বলেন, ‘আমার অসুস্থ স্বামী কোনো মতো ভ্যানের মালামাল বহনের কাজ করে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি পায়। তাও সপ্তাহে দুই-চার দিন যেতে পারলে বাকি দিন বিছানায় পড়ে থাকে। এর মধ্যে বাসা ভাড়া দিই মাসে পনেরোশ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে কোনোরকমে সংসার পুরো মাস টানি। অসুস্থতার কারণে উনি (স্বামী) দৈনিক কাজ করতে পারেন না। গত পাঁচ বছরে একটা নতুন কাপড় কিনতে পারি নাই। তারেও একটা নতুন লুঙ্গি কিনে দিতে পারি নাই। প্রতিবেশীদের দেওয়া পুরান কাপড়-চোপড় পরেই জীবন কাটছে। আগে তরকারি না থাকলে একটা ডিম ভেজে ভাত খেতাম। এখন ডিমের এতো দাম! তাই সেটাও কেনা যায় না। মাঝেমধ্যে কম দামে ভাঙা ডিম কিনি।’
‘শাকসবজি, মাছ-মাংস সবকিছুর দাম আমাদের সাধ্যের বাইরে। আগে মাসের মধ্যে একবার-দুবার হলেও মুরগি কিনতাম। দাম বাড়ার পর এখন গিলা-কলিজাও কিনতে পারি না। গরুর গোশতের কথা আর কী বলবো, সেটা আমাদের কাছে স্বপ্ন। বছরে একবার কপালে জোটে তাও কোরবানির ঈদে, প্রতিবেশী কেউ দিলে। বুক-পিঠ-কোমরের ব্যথায় দাঁড়াতে পারি না। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে কাজ করতে হয়। মাঝেমধ্যে ‘আত্মহত্যা’ করতে মন চায়। পরে আবার ভাবি, আমি আছি দেখে তো অন্তত তারে নিয়ে ভালো-মন্দ খেতে পারছি। আমি না থাকলে তার কী হবে?’ বলেন ফুল বানু।
ফুল বানুর এক মেয়ে রাশেদা আক্তার। তাকে গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। তার স¦ামী গ্রামের একটি ছোটখাটো দোকান করে। পারিবারিক কলহে কিছুদিন আগে মায়ের কাছে চলে আসেন বাচ্চাকে নিয়ে। এখন মায়ের কাছেই পাশের আরেকটি বাসায় থাকেন। আরেক ছেলে ফারুখ আহমদ। পাঁচ বছর আগে দেশ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে প্রবাসে পাঠিয়েছে। প্রবাসের যাওয়ার পর প্রথম দুই বছর ভালো থাকলেও করোনায় কোম্পানি বন্ধ করে দেয়ায় এখন নিঃস্ব প্রায়। টাকা পয়সা দিতে পারে না বলে বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে।
ফুল বানু বলেন, ‘মেয়ে আমাদের পাশের একটি বাসায় থাকে। স্বামীর দেয়া সামান্য টাকায় কোনো মতো বাচ্চাদের নিয়ে পড়ে আছে। মাঝেমধ্যে ১০০-২০০শ টাকা তার বাবার জন্য দেয়। সেটা দিয়ে তার বাবার ওষুধ কেনা লাগে। এলকায় এমন এক অবস্থায় আছি লজ্জায় মানুষের কাছে হাত পাতি না আবার ঠিকমতো সংসারও চালাতে পারি না।’
ফুল বানুর স্বামী হারিছ আহমদ। তার গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার একই গ্রামে। এক সময় বাপ-দাদাদের সম্পত্তির মালিক ছিলেন হারিছ মিয়া। দুই দুই বার বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে ভিটে মাটি সব বিক্রি করে হারিফ মিয়া। সেই থেকে ভাড়া বাসায় জীবন কাটতেছে তাদের।
হারিছ মিয়ার বয়স বর্তমানে ৬১ বছর হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ দেওয়া আছে ১৯৭০ সাল। এ জন্য তিনি বঞ্চিত হলেন বয়স্ক ভাতা থেকে।
হারিছ মিয়া বলেন, ‘আমাকে কোনও ধরনের বয়স্ক ভাতা বা অন্য কোনও ভাতা দেওয়া হয় না। এলাকার মেম্বার বলেছে, আমার নাকি এখনও বয়স্ক ভাতা পাওয়ার বয়স হয়নি। আমি অসুস্থতার কারণে ঠিকমতো ভ্যান গাড়িটিও চালাতে পারি না। দুই-তিন চালালে পরের দিন পা পঙ্গু হয়ে আসে। এই তো গত পরশু ভ্যান থেকে মালামাল নামাতে গিয়ে ঘুরে পড়ে মাথা পেটে যায়। আমার স্ত্রীও কোনো মতো বেঁচে আছে। গত কয়েক মাস আগেও তার জরায়ূ অপারেশন করতে হয়েছে। সেই খরচও মানুষের হাতে পায়ে দরে ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
আক্ষেপ করে হারিছ মিয়া বলেন, ‘একজন বাবা হয়ে সন্তানের প্রতি এবং স্বামী হয়ে স্ত্রীর প্রতি যে দায়িত্ব পালন করা উচিত, অসুস্থতার কারণে তা করতে পারি না। স্বামী হয়ে স্ত্রীর ঠিকমতো ভরণ-পোষণ দিতে পারি না। তাদের কখনও ভালো খাবার কিনে খাওয়াতে পারি না। ভালো কোনও পোশাক কিনে দিতে পারি না। কীভাবে চলবে জীবন, জানি না।’
[ছবি: ফুল বানু ও তার স্বামী হারিছ আহমদ]
Deprecated: Theme without comments.php is
deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in
/home/somoyerb/public_html/wp-includes/functions.php on line
5059
এই বিভাগের আরো সংবাদ