স্টাফ রিপোর্টার:
হাওরের প্রকৃতি,স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হিজল ও করছ গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বৃক্ষসখা তরুণের দল।
হাওর ও ভাটির জনপদ হিসেবে সুপরিচিত, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ঐতিহ্য বাহী দিগজান গ্রামের একঝাঁক বৃক্ষসখা তরুণের নিজস্ব অর্থায়নে ১৫০ টি হিজল ও করছ গাছের চারা লাগানো হয়েছে।
গ্রামের উত্তর পাশে পুরনো একটি করছ বাগের ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষায় এই উদ্যোগ সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে।
তাদের এই মহৎ কাজে অভিনন্দন জানিয়েছেন সচেতন মহল। গত শুক্রবার থেকে হিজল ও করছ গাছের চারা লাগানোর কার্যক্রম শুরু করেন বৃক্ষ প্রেমিক তরুণেরা। তাদেরকে ওই গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বিরাও হাজারেরও বেশি গাছের দিয়ে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রামের মুরুব্বিরা জানান,
যেখানে প্রকৃতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পরিবেশ দুষিত করছে। গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। সেখানে হাওরাঞ্চলে একঝাঁক তরুণদের এমন একটা উদ্যোগ শিক্ষনীয় ও চিরস্মরণীয়।
হাওর , পরিবেশ এবং ,জীবন রক্ষার্থে এই উদ্যোগ সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে।
ধর্মপাশা উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও দিগজান গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মুর্শেদ চৌধুরী তপন বলেন,আমাদের দিগজান গ্রামের করছ বাগানটি প্রায় বিলুপ্তি পথে। এমতাবস্থায় গ্রামের ইয়াং জেনারেশন এবং মুরুব্বিদের সহযোগিতায় আমরা করছ বাগে আবারও দুই হাজার হিজল করছ গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি এবং কাজ চলমান আছে। এই করছ বাগানটি আমাদের দিগজান গ্রামকে প্রায় তিনশ বছর ধরে বর্ষাকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে আসছে।দুর্যোগ মোকাবিলায় সাপোর্ট দিয়ে আসছে।সেই সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি, আমাদের করছ বাগের অস্তিত্ব, আমাদের এলাকার একার সম্পদ নয়,আমাদের এলাকার পাশাপাশি, সারা জাতির, রাস্ট্রের সম্পদ।এই সৌন্দর্য এবং অস্তিত্ব রক্ষায় আমরা সবসময় করছ বাগ পরিচর্যা করব ইনশাআল্লাহ।
দিগজান গ্রামের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাবেল বলেন, বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু, পরম আত্মীয়। বৃক্ষকে বাদ দিয়ে মানবজাতির অস্তিত্ব চিন্তা করা যায়না।তথাপি সর্বকালের অস্তিত্ব, অধিকার সেই বৃক্ষ অনস্বীকার্য। একটি বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে একটি আশা রোপণ করা। তিনি বলেন, আমরা আরও উজ্জীবিত, আনন্দিত এবং উৎসাহিত হই তখন,যখন দেখি, আমাদের হাওরাঞ্চলের দিজান গ্রামে পুরোনো সেই ঐতিহ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একঝাঁক তরুণেরা,কিশোরেরা, গ্রামের মুরুব্বিদের সুপরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে দেড় শতাধিক হিজল ও করছ গাছের চারা লাগিয়েছেন। তাদের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ সকলের মাঝে সঞ্চারিত হবে, এটা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর ও দিগজান গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসান চৌধুরী মাসুম মাসুম বলেন, একজন সুস্থ মানুষের জীবনে দৈনন্দিন কমপক্ষে গড়ে ৫৫০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।একজন লোক জন্ম থেকে শুরু করে ৩০ বছর পর্যন্ত যে অক্সিজেনটুকু গ্রহণ করে, সেই অক্সিজেনের মৃল্য হচ্ছে সাড়ে এগারো কোটি টাকা। কিন্তু সেই অক্সিজেন বিনামূল্যে পাচ্ছে। বৃক্ষ থেকে পাচ্ছে। বৃক্ষ আমাদের জীবনের অস্তিত্ব, আমাদের জীবনের আশা।বৃক্ষ মানুষকে সরবরাহ করে সুখী,সমৃদ্ধ, সবুজ শ্যামল ও সুন্দর পৃথিবী তাই বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই দেশের প্রত্যন্ত এলাকা,সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় আমার জন্মভূমি দিগজান গ্রামের কিছু পরিবেশবাদী মানুষ, আমার অগ্রজ,অনুজ এবং সহকর্মীরা অতি সম্প্রতি এক বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।আমি বিশ্বাস করি,এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তারা অতি সম্প্রতি আমাদের করছ বাগে হাজারখানেক হিজল ও করছ গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।আমি গর্বিত, আমি এতদূরে অবস্থান করার পরও তারা আমাকে অংশীদার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এইজন্য আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি আশা করি, এই ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির রেজা জানান, পরিবেশ – প্রতিবেশ, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে।এই পরিস্হিতিতে তরুণেরা সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অস্তিত্ব রক্ষায় হিজল ও করছ গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের এই মহৎ একটি উদ্যোগ দেখে অন্যান্য এলাকার তরুণেরা উৎসাহিত হবে, তারাও হাওর ও জীবন রক্ষায় গাছ লাগাবে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসবে।তরুণদের এমন একটি উদ্যোগকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের পক্ষ তাদেরকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা দিপা জানান,আমার ইউনিয়নের অন্তর্গত আমার গ্রামের তরুণেরা এবং মুরুব্বিগণ গ্রামের করছ বাগে ঐতিহ্য, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ,প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে হিজল ও করছ গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।আমি তাদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এই করছ বাগানটির সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ রক্ষায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবব ইনশাআল্লাহ।