মোঃ মোশফিকুর রহমান স্বপন, সুনামগঞ্জ:
কমিউনিস্টদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে ডাঃ এম এ করিম হয়ে উঠলেন রাজনীতিবিদ এবং সে রাজনীতি হল গণমানুষের মুক্তির জন্য, আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য নয়। যা ডাঃ এম এ করিম আজীবন লালন করেছেন। ‘৪৬-এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মেডিকেল টিম নিয়ে দাঙ্গাপীড়িত বিহারে গিয়েছিলেন। এ সময় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা না হলেও গঠিত হয়েছিল পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ডাঃ এম এ করিম এই সোসাইটির প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ডাঃ এম এ করিম অত্যন্ত সচেতন ছিলেন আজকের যুগে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের নেতৃত্ব ছাড়া সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হবে না। এজন্যে তিনি সবসময় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। ১৯৫০ সালে জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ঐ কলেজের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র আন্দোলন, ‘৫৪ নির্বাচনসহ সর্বত্রই তাঁর বিচরণ ছিল। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন, ন্যাপ গঠন, যুবলীগ গঠন সর্বত্রই তিনি ছিলেন সরব। ১৯৫৭ সালে কাগমারিতে আওয়ামী লীগের বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় সিয়েটো সেন্টো চুক্তি এবং মার্কিন অনুগত পররাষ্ট্র নীতির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সমসাময়িক সময়ে কমরেড আবদুল হকের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাত ও পরিচয় হয়। প্রথম পরিচয়েই তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক গভীর ঘনিষ্ঠতা। সেই ঘনিষ্ঠতার ধারাবাহিকতা তিনি কমরেড হক জীবিত থাকাকালে ও পরবর্তীতে শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছেন ঐতিহাসিক কারণে।
গণমানুষের চিকিৎসা সেবায় ডাঃ এম এ করিম অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি আজীবন অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গিয়েছেন। শ্রমিক দিনমজুর নিম্নবিত্তদের চিকিৎসক হিসেবে তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। তিনি মওলানা ভাসানীরও একান্ত চিকিৎসক ছিলেন। তাছাড়া প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীসহ অন্যান্য রাজনীতিকদেরও তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেছেন। সস্তা এবং অল্প ঔষধ এবং সাধারণ রোগে অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে প্যাথলজিও করতেন রোগীদের খরচ বাঁচাতে। এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তিনি সাম্রাজ্যবাদের মুনাফা লুটার বাজার হিসেবে দেখতেন। তাই তিনি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি হিসেবে বুঝতেন সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি তথা সকল প্রকার শোষণ-শাসনমুক্ত স্বাস্থ্য ও সমাজ ব্যবস্থাকে। আর তাই চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
ডাঃ এম এ করিম ‘৭০-এর পর থেকে রাজনৈতিক কারণেই চিকিৎসা পেশা সামনে রেখে তার রাজনৈতিক ভূমিকা অব্যাহত রাখেন। তাঁর সকল ভূমিকাই ছিল এদেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লবী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৭১ সালে সৃষ্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিল সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার ফসল হিসেবে। ভারতবর্ষকে পরাধীন করার জন্য ইংরেজ কর্তৃক কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্র, ‘৪৭-এর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে নয়া উপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র এগুলোকে তিনি একসূত্রে গ্রথিত বলে মনে করতেন। ‘কাশিমবাজার থেকে আগরতলা’ নামক পুস্তকে তিনি এ সম্পর্কে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। ১৯৮০ সালের পর থেকে তিনি পুণরায় সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করার আগ্রহী হন।
দুনিয়ার সর্বহারা শ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণ এক হও এই প্রতিপ্রাদ্যকে সামনে রেখে
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক
ডা.এম.এ.করিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট জেলা শাখার সভাপতি রতনাঙ্কুর দাস জহরের সভাপতিত্বে
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এনডিএফ সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শাহীন আলম।
শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কমিটির আয়োজনে শহীদ জগৎজ্যােতি পাঠাগার লাইব্রেরিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম সদরুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লেখক ও কবি ইকবাল কাগজী, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির জেলা শাখার সভাপতি এড.নিরঞ্জন তালুকদার, জাতীয় ছাত্রদল জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দু তালুকদার মিন্টু।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট জেলা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক মো.শফিকুল ইসলাম, জাতীয় ছাত্রদল জেলা শাখার যুগ্ন আহবায়ক মো.রিদওয়ানুল হক নিহাল, আহবায়ক শুভ তালুকদার, জেলা মহিলা সমিতির আহবায়ক দিপ্তী সরকার, স’মিল শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় সভাপতি আইয়ুবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সদর থানার সভাপতি কাদির মিয়া সহ নারী নেত্রীরা।