মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গাজীপুরঃ
ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে তারপর স্বামীর বাড়ি গাজীপুরে ছুটে এলেন মার্কিন তরুণী! এসেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী কুমারভিটা এলাকার যুবক ইমরান খানের কাছে।
সোমবার (১১ জুলাই) ভোরে তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর ইমরানের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। এলাকায় এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাড়া-প্রতিবেশীরা তরুণীকে দেখতে ভিড় করছেন ইমরানের বাড়িতে।
লিডিয়া লুজা (Lidia Khan Loza) ভোরে বিমানবন্দরে পৌঁছালে ইমরান খান তাকে স্বাগত জানান। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন। ঈদের পরদিন ভিনদেশি তরুণী নববধূকে পরিবারের সদস্য হিসেবে পাওয়ায় ইমরানের পরিবার অনেক খুশি।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেটের বাসিন্দা লিডিয়া লুজা। তার বাবা মারা গেছেন। মা অন্য সংসারের সদস্য। তারা দুই ভাই, এক বোন। ছোটবেলা থেকে লিডিয়া তার দাদুর কাছে বড় হয়েছেন। তিনি জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে চাকরি করতেন।
আর ইমরান খান গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী কুমারভিটা এলাকার মৃত জালাল উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। তিনি ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সির শিক্ষার্থী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। তিনি লিডিয়া লুজাকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছেন। তাই লুজার নামের সঙ্গে স্বামীর পরিবারের উপাধি হিসেবে ‘খান’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে।
লিডিয়া লুজা খান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। প্রতিদিনের আলাপচারিতায় ইমরানকে ভালো লেগে যায় তার। পরে উভয় পরিবার রাজি হলে লিডিয়া বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন
ইমরান কে।
তিনি আরও জানান, ইমরান একজন সহজ-সরল, সৎ ও ভালো মানুষ। সব মানুষ তার ভাষা না বোঝার কারণে সবার সঙ্গে কথা বলতে তার একটু সমস্যা হচ্ছে। তিনি স্থানীয় বরমী বাজার ও আশপাশের প্রকৃতি ঘুরে দেখেছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে মিশতে চাইছেন। ইমরান তার অনুভূতি মানুষকে বোঝাতে সাহায্য করছেন। বাংলাদেশিদের অতিথিপরায়ণতা লুজাকে খুব মুগ্ধ করেছে। এ দেশের প্রকৃতি ও মানুষকে তার খুব ভালো লেগেছে।
লুজা জানান, তার শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম অসুস্থ। তাই মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। তবে বেশির ভাগ সময় শ্বশুরবাড়িতেই থাকবেন। শাশুড়ি সুস্থ হলে ইমরানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করবেন।
এ বিষয়ে ইমরান খান জানান, গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে মাসখানেক পরেই লিডিয়া তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি রাজি হলে মার্চ মাসের প্রথম দিকে লিডিয়া তুর্কি ট্রানজিট করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। মার্কিন নাগরিক হওয়ায় তার ধারণা ছিল ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে ঢুকতে পারবেন। কিন্তু অন-অ্যারাইভাল না থাকায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে সেদিন তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বাড়ি না ফিরে নেপাল গিয়ে পৌঁছান।
ইমরান আরও জানান, উভয় পরিবারের সিদ্ধান্ত হলে তিনি নেপালে উড়াল দেন। তারা নেপালে গিয়ে দেখা করেন। পরে লিডিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ নেপালের একটি মসজিদে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়েতে ইমরানের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও লুজার পরিবারের কেউ ছিলেন না। নেপালে তারা কয়েক দিন অবকাশ কাটিয়ে যার যার দেশে ফিরে যান। পরে ইমরানের সহযোগিতায় ভিসার মাধ্যমে আজ সোমবার লিডিয়া লুজা খান বাংলাদেশে আসেন।
ইমরান বলেন, তার পরিবারের সবাই লিডিয়াকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছেন। লিডিয়াও সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন। উভয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠছে। তিনি তাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। সব ঠিক থাকলে তিনিও লিডিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে চান।
ইমরানের মা আনোয়ারা বেগম জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে পেয়ে তিনি খুশি। আর ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তারা বিয়েতে আবদ্ধ হয়েছেন, তাই তিনি পারিবারিকভাবে মেনে নিয়েছেন।