মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গাজীপুরঃ
ষড়ঋতুর বাংলায় শীতের জরাজীর্ণতাকে বিদায় জানিয়ে অপরূপ রূপে প্রকৃতিতে আগমনীর বার্তা দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের পতাঝরা মর্মর ধ্বনিকে ছাপিয়ে গাছের ডালে ডালে ফুটছে রঙিন ফুল আর কচি পাতার সৌরভ।
বসন্তের ছোঁয়ায় পলাশ, শিমুল, মান্দার বন রাঙা বধূর সাজে সেজে উঠছে। আগুনরঙা ফুলে ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে গাছপালা। বনে বনে ফুটেছে হাজারো বুনোফুল।
সারা বছর সবার অলক্ষ্যে থাকা কোকিল পাখিও বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কুহু কুহু সুরে ডাকার প্রতিক্ষায়। ঋতুরাজের রূপ দেখতে মোহিত প্রাণীকূল মেতে উঠেতে মিলনের আনন্দে।
বসন্ত চিরকালই কবি সাহিত্যিকদের গান, কবিতাসহ নানা রচনা লেখার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছে। প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, বসন্ত ঋতুতে প্রকৃতি বসন পাল্টায়, আগামী বছর কেমন হবে তার নাকি আচ পাওয়া যায় বসন্তের রূপ দেখে।
বাংলায় অন্য কোন ঋতুকে ঘিরে উৎসব না থাকলেও প্রতি বছরই নানা সাংস্কৃতিক দল বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে থাকে। তবে নগরায়নের দাপটে প্রকৃতি থেকে বসন্ত দিন দিন তার জৌলুস হারাচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনে এখন যথেচ্ছভাবে কাটা হচ্ছে নানা প্রজাতির গাছ। এসব গাছের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল, পলাশের মতো গাছও।
হাওড়, নদীর দুই পাড় সহ গ্রামের প্রায় প্রতিটি এলাকায় শিমুল গাছ দেখা যেতো একটা সময়, বসন্ত এলে গাছের তলা লাল হয়ে থাকতো ফুলের পাপড়িতে। ফুলের মধু খেতে আসা পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকতো সারা দিন।
কিন্তু এখন আর তেমন বেশি পরিমাণে শিমুল গাছ চোখে পড়ে না। তাই চোখ ফেরালেই বসন্তের রূপ আর ততোটা দেখা যায় না। তবে এখনো দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে শিমূল, পলাশ গাছ দেখাযায় এখনো।
দূষণসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে এসব গাছ বেঁচে থেকে প্রতি বছর বসন্ত এলো জানান দেয় প্রকৃতিকে।এটাও জানায় তার রূপ বৈচিত্র্য হারায়নি এতোটুকুও।
কিন্তু যে ভাবে গাছ নিধন চলছে সেই সঙ্গে বায়ু দূষণ ও পরিবেশ দূষণের ফলে বৈরি আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে এসবের কারণে আগামী দিনে বসন্তের রুপ জৌলুস থাকবে তো? এখন প্রশ্ন একটাই।
তবে বসন্ত ঋতুর সব কিছুই ভালো এমনটা কিন্তু নয়। হাল্কা শীত হাল্কা গরম এই পরিবেশে অন্য সবের সঙ্গে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটায় রোগ জীবাণুও। তাই বছরের এই সময় খুব বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা যায় সর্দিকাশি থেকে শুরু করে হাম ও বসন্তের মতো অসুখের। তাই এই সময় সব বয়সী মানুষের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। সব উৎকণ্ঠার শেষেও
যেনো কবির ভাষায় বলতে পারি, “ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত”