ড. ইউনুসের ‘তিন শূন্য’র বিশ্ব গড়ার থিওরি প্রফেসর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
ড. ইউনুসের ” অলিম্পিক লরেল” পুরস্কার প্রাপ্তিতে তাঁকে স্বাগতম জানাচ্ছি। তিনি পুরস্কার পাওয়ার পর
” তিন শূন্য” র বিশ্ব গড়ার আহবান জানান। তা হলোঃ-
(১) কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনা,
(২) দরিদ্রতা চিরতরে দূর করতে সম্পদ কেন্দ্রীকরণ শূন্যতে নামিয়ে আনা,
(৩) প্রতিটি মানুষের সহজাত উদ্যোক্তা- শক্তি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব শূন্যতে নামিয়ে আনা,
আবারও স্বাগতম জানাচ্ছি তাঁকে যুগোপযোগী থিওরি প্রদান করার জন্য। বর্তমানে এই তিনটি বিষয় সারাবিশ্বের মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।করোনার সংকট মুহুর্তে তা আরও চরমভাবে প্রতিটি মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দিচ্ছে। তাঁর থিওরি প্রদানের সাথে সাথে যদি তিনি বাংলাদেশের জন্যও এই বিষয়গুলো নিয়ে এগিয়ে আসেন তাহলে দেশ মাতৃকা অনেক উপকৃত হবে। আমাদের দেশে অনেক সামর্থ্যবান আছেন তাঁরা যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন তাহলে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন করা সহজ হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ের সচেতনতায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমনের বিষয়ে আমাদের যুব সমাজকে পরিবেশ শিক্ষা প্রদান ও সচেতনতা সৃষ্টি করে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশ অন্যদেশের কার্বন নিঃসরণের দ্বারা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের অতিমাত্রায় লোভের কারণে, আমাদের মতো ছোট দেশগুলো তাদের কার্বন নিঃসরণের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এইজন্য প্রয়োজন কার্বন ট্যাক্স আরোপ করা যাতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনে।
এক গবেষণায় বলা হয়, ৪০ লাখ বছরের মধ্যে এইবছর (২০২১ সাল) বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা সর্বোচ্চ ছিল।
উচ্চ গ্রীনহাউজ নিঃসরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়ানোর বিনিময়ে মূল্য পরিশোধ করা উচিত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ( আইএমএফ) বলছে,প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় হিসেবে উচ্চ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটন কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য ৭৫ ডলার করে দেয়া উচিত।
সংস্হাটি বলেছে, যেসব শিল্প কারখানা তাদের পণ্য উৎপাদনের সময় যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ছড়াবে, সে হিসেবে তাদের অর্থ দিতে হবে। তবেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য সহজে অর্জিত হতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই ব্যবস্হা চালু রয়েছে।
জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে আইএমএফ বলেছে,উন্নয়নশীল দেশগুলোর তাদের দেশের কার্বন নির্গমনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার সবচেয়ে দ্রুত ও সহজ উপায় হচ্ছে এটি।
ড. ইউনুসের তিনটি বিষয়ের প্রত্যেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের দরিদ্রতা দূরীকরণ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ বা প্রশমন ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত।
জলবায়ুজনিত ক্ষতি প্রশমন না করা গেলে সেখানে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব নয়।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ বা প্রশমনে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এইজন্য তাদের দরকার পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক শিক্ষা ও সচেতনতা।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ” পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ ” নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মাঝে সারাদেশে পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। যার ফলে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও টেকসই উন্নয়ন সহজতর হবে।
পরিশেষে,ড. ইউনুসসহ দেশের সকল টেকসই উন্নয়নকামী ব্যক্তিকে তরুণ সমাজকে পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতায় এগিয়ে আনার জন্য পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশে’কে সহযোগিতা করার আহবান জানাচ্ছি।
লেখকঃ শিক্ষাবিদ ও গবেষক
এবং প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ মেন্টর
পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ।
তাংঃ ২৯ জুলাই ২০২১।