“প্রেম, প্রণয় ও দাম্পত্যের কয়েকটি ধাপ”
লেখা-মুহাম্মদ ফজলুল হক৷
ধাপ ১) বয়সন্ধির ধাপ৷ ছেলের বয়স যখন ১৪+, মেয়ের বয়স যখন ১১+…৷ বয়সন্ধিকাল শুরু৷ শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সময়৷ প্রত্যেক ছেলে মেয়ে নিজেকে অাবিস্কার করতে থাকে নতুনভাবে৷ চেহারায় মায়া ও লাবণ্যতা বেড়ে যায়৷ সবাই স্নেহ করে, আদর করে৷ পরিবারের বড়রা নতুনভাবে মূল্যায়ন শুরু করে৷ আগের মতো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে না৷
নিজের বয়সের কাছাকাছি কাউকে দেখলেই ভালো লেগে যায়৷ সবাইকে বন্ধু ভাবতে ভালো লাগে৷ ছেলেদের ক্ষেত্রে সমবয়সী, ছোট কিংবা মাঝে মাঝে বড় আপুদেরও ভালো লাগে৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে বড় ভাই টাইপের ছেলেদেরকে দেখলে প্রেম প্রেম ভাব আসে৷ কিন্তু ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ে লজ্জা ভয় শঙ্কায় সহজে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না৷ সহজে কারো নিকট নিজেকে সঁপে দিতে পারে না৷
ধাপ ২) প্রেমের অভাব বোধের ধাপ৷ ইন্টারমিডিয়েট পরবর্তী সময়৷ অনার্স বা ডিগ্রীতে অধ্যয়নরত ছেলে বা মেয়ে৷ এ বয়সে একটা দুটা প্রেমিকা/প্রেমিক না থাকাটা আনস্মার্টনেস বলে মনে হয়৷ সবচাইতে কালো ছেলেটি/ কালো মেয়েটিও ছুটিয়ে প্রেম করছে৷ অথচ আমি পারছি না৷ এমন একটা হাহাকার মনে উঁকি দেয়৷ যারা ইতিমধ্যে প্রেম করছে তারাও আরো ভালোর আশায় হাহুতাশ করে৷
ধাপ ৩) ছুটিয়ে প্রেম করার ধাপ৷ এ ধাপে প্রেমিক প্রেমিকার চোখে রঙ্গিন চশমা, পিঠে দুটি ডানা গজায়৷ পা মাটিতে পড়ে না৷ ঘুম হতে উঠা থেকে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত সব কিছুতে প্রিয় মানুষটি থাকে মনে৷ এমনকি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নেও থাকে সে৷ দৈনন্দিন সকল কাজ কর্ম তাকে ঘিরে৷ যাদের জীবনে সেই প্রিয় লোকটি নেই তাদের মাঝে থাকে কাউকে প্রিয় বানানোর হাহাকার ও প্রচেষ্টা৷
ধাপ ৪) বিয়ের ধাপ৷ ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়স প্রায় ত্রিশ বা তার বেশি৷ পড়াশোনা শেষ৷ পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেছে বা করার চেষ্টা চলছে৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশ বা তার বেশি বছর বয়স৷
ছেলেটি যদি একটু ভালো চাকুরি করে বা ভালো কোন ব্যবসা করে, পরিবার মোটামুটি টাকা ওয়ালা হয়, ছেলে দেখতে কিছুটা সুদর্শন হয়, একটু লম্বা হয় তবে তার মতো ছেলেতো লাখে একটা৷ সুতরাং তার জন্য চাই বলিউড নায়িকা ঐশ্বরিয়ার নাতিনকে৷
অপর পক্ষে মেয়ে যদি কিছুটা সুশ্রী হয়, একটু লম্বা হয়, পরিবার মোটামুটি মধ্যবিত্ত হয় তবে তারে আর ঠেকায় কে? তার জন্য চাই সেনাবাহিনীর মেজর কিংবা ম্যজিস্ট্যাট পাত্র!
এভাবেই চলে সৌন্দর্য আর ঐশ্বর্যের বড়াই৷ মুখে যতই বলুক জাতের মেয়ে কালো ভালো, কিংবা ভদ্র নম্র চরিত্রবান ছেলে/মেয়ে… এসব পুঁথিগত কথা৷ এগুলা সবাই জানে, সবাই বলে৷ তবে অন্যের জন্য, নিজের জন্য না৷
বিয়ে একটি চরম আকাঙ্খিত বিষয় হলেও এ ধাপে এসে অনেকে হোছট খায়৷ বিয়ে করতে ভয় পায়৷ আরো সময় নিতে চায়৷ বিশেষ করে ছেলেরা আর্থিক সঙ্গতি অসঙ্গতির বিষয়টি বিবেচনায় অনে বার বার পিছু হটে৷
শেষমেষ সবাই বিয়ে করে৷ তবে অতৃপ্তি নিয়ে৷ ছেলে/মেয়ে সবার ধারণা সে এ বিয়ে করে হেরেছে৷ তার প্রাপ্য ছিলো আরো উন্নত লাইফ পার্টনার, কিন্তু পেয়েছে কাঙ্খিত প্রাপ্যতার চাইতে অনেক নিচে৷
ধাপ ৫) হানিমুন প্রিয়ড৷ অবশেষে ছেলেটা/মেয়েটা বিয়েটা করেই ফেললো৷ কেউ করেছে প্রেম করে, কেউ করেছে পারিবারিক ভাবে৷ যে যেভাবে করুক সেটা বিবেচ্য না৷
শুরু হলো “wow” ধাপ। নতুন করে একজন মানুষকে আবিষ্কার করা আসলেই রোমাঞ্চকর। একই বিছানায় ঘুমানো, নিজেকে সুন্দর করে সাজানো, পরিপাটি থাকা, এক সাথে রান্না করা এবং খাওয়ানো, এক সাথে গোসল করা, অনাগত সন্তানের নাম ঠিক করা, ভবিষ্যত রাজপ্রাসাদের নকশা কল্পনা করা ইত্যাদি ইত্যাদি এ সময়ের প্রধান কাজ। এ সময়ে নিজেদের চির চেনা বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনেরা অনেকটা দূরে চলে যায়৷ আগের মত বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, শপিং, ফেসবুক চ্যাটিং ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়৷ সে জায়গাটা দখল করে নেয় শ্বশুরালয়ের নতুন আত্মীয় স্বজনেরা৷
বিয়ের শাড়ী কাপড়, গয়না গাটি পরে আত্নীস্বজনদের বাসায় যাওয়া, বাহিরে বেড়াতে বেরুনো, ছাদে গিয়ে জোসনা উপভোগ করা, একজনের কাঁধে অপরজন মাথা এলিয়ে সুখের ঠিকানা করে নেয়া, একে অপরকে গান শুনানো এ সব কিছুই বলে দেয় যে জীবন কখনোই এমন সুন্দর আর উপভোগ্য ছিলো না। এ সময়ে একজনের কাছে অপরজনের সব কিছুই ভালো লাগে৷ কোন কিছুই খারাপ লাগে না৷ এ সব কিছুর পিছনে স্বামী স্ত্রীর মাঝে স্থাপিত শারীরিক সম্পর্ক একটা বিরাট ভুমিকা পালন করে। স্বামী স্ত্রী একে অপরকে বলে বুড়ো হলেও তুমি আমাকে এভাবে ভালোবাসবে, আদর যত্ন করবে৷ আর এ কথা অনায়াসে উভয় পক্ষই মেনে নেয়৷ মধুর সংলাপে কখন রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না৷ পরে কর্মস্থলে গিয়ে ঝিমুতে হয়৷ দুজন দুজনকে পৃথীবির সবচাইতে সুখীতম মানুষটি ভাবে৷ এই সময়টাই “honeymoon Period”. এটি ছয় মাস থেকে এক বছর স্থায়ী হতে পারে৷
ধাপ ৬) নবাগত সন্তান লাভের আনন্দের ধাপ৷ যারা খুব একটা দেরি না করে সন্তান নিয়ে থাকেন তারা এ ধাপটি তাড়াতাড়ি পেয়ে থাকেন৷ যারা সন্তান নিতে দেরি করেন তারা এ ধাপটি দেরিতে অর্জন করেন৷ নতুন পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের অনুভূতি কেমন হয় তা যারা হয়েছে তারাই বুঝতে পারেন৷ এ সময় মানুষের অন্তরের চোখ খুলে যায়৷ নিজের পিতা মাতা নিজেকে নিয়ে ছোট বেলায় কেমন কষ্ট করেছে সেটা অনুধাবন করে অনেকে কাঁদেন৷ নিজের সন্তানের মধ্য দিয়ে পিতা মাতাকে নতুনভাবে আবিস্কার করেন৷ অফিস আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য, কিংবা দৈনন্দিন সকল কাজ কর্ম সেরে পিতা মাতা চেষ্টা করে নতুন সন্তানকে সময় দেয়ার৷ সন্তানের প্রস্রাব, পায়খানা, হাসি, কান্না, ঘুম, খাওয়া এসবই মা বাবার কাছে দেখতে ভালো লাগে৷ সন্তানের মুখ দর্শনেই যেন পৃথিবীর তবৎ সুখ৷
ধাপ ৭) এটা হচ্ছে অস্বস্তির শুরুর ধাপ৷ “Honeymoon Period” শেষ হবার পরপরই এইধাপের শুরু। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মাঝে যে রোমাঞ্চ ছিল, তা অনেকেটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। উভয়েই উভয়ের দুর্বলতা গুলো দেখতে শুরু করেছে। যেমন স্বামী হয়তো জোরে জোরে নাক ডাকেন৷ স্ত্রী হয়তো সারাদিন ঘুমান অথবা রান্নাঘরে খুব ধীরে ধীরে কাজ করেন৷ স্বামী বেশি চিল্লাপাল্লা করেন, স্ত্রী বেশি কথা বলেন৷ স্বামী সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন এবং টেলিভিশনে খালি খেলা দেখেন৷ স্ত্রী ফসবুকে পুরনো বন্ধু বান্ধবীদের সাথে চ্যাট করেন কিংবা টিভিতে সিরিয়াল দেখেন৷ স্বামী অন্য মেয়েদের সাথে মোবাইলে কথা বলেন, রাস্তাঘাটে সুন্দরী মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেন৷ স্ত্রী স্বামীর কথামতো কাজ করেন না, স্ত্রী বেশি বেশি ডিমান্ড করেন ইত্যাদি সমস্ত সমস্যা গুলো আস্তে আস্তে প্রকট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আর্থিক সঙ্গতি অসঙ্গতির দিকটা প্রকট হয়ে উঠে৷ যাদের আয় ব্যয়ের সমন্বয় কম তাদের ক্ষেত্রে কলহটা বেশি দেখা যায়৷ সবকিছু মিলিয়ে স্বামী এবং স্ত্রী মনে মনে ভাবতে শুরু করেন কি সমস্যা, কেন এমন হচ্ছে? এরপর আস্তে আস্তে তাদের মনের কোনায় প্রশ্ন জাগে, “এজন্যই কি বিয়ে করেছিলাম?? সবাই কি এমনই হয়??”
ধাপ ৮) ক্রোধানল ধাপ৷ এই ধাপে স্বামী স্ত্রীর একে অপরের ভুলগুলো বারংবার সামনে আসতে থাকে। ফলে এক পর্যায়ে সেগুলো স্নায়ু এবং উভয়ের মনের উপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে। অবশেষে রাগের মাধ্যমে তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। আবার অনেকে অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে ক্ষোভ চেপে রাখেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকেন। এসময় কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। গোয়ার্তুমী, ঘাড় তেড়ামী ইত্যাদির মাধ্যমে প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বাভবের উপর অবিচল থাকে।
বিশেষ করে যারা প্রেম করে বিয়ে করেছে তারা এ ধাপে বেশি সমস্যায় পড়ে৷ পূর্বের রঙ্গীন চশমা খসে পড়ার কারণে আগের সময়ের সাথে বাস্তবতার ফারাকটা অনেক বেশি মনে হয়৷ আর হানিমুন প্রিয়ডের সময়ে একে অপরকে দেয়া কথা, প্রতিশ্রুতির সাথে বিস্তর ফারাক দেখতে পায়৷ স্বামী স্ত্রী উভয়ে মনে করে তার পার্টনার তাকে আগের মতো ভালোবাসে না৷ পার্টনার তাকে ঠকাচ্ছে, তাকে বুঝতেছে না৷ নিজের দোষ নাই, যত্তো দোষ পার্টনারের৷ সামান্যতম বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ অনেক বড় আকার ধারণ করে৷
এই ধাপেই স্বামী-স্ত্রী মনে মনে ভেবে থাকে, “এই মানুষটাকে বিয়ে করে কি ভুলই করলাম? নাহ্, জীবনে এত বড় ভুল করে ফেললাম?” জ্বী না! ভাইয়েরা এবং বোনেরা। আপনারা কোন ভুল করেননি। বিবাহিত জীবনের একটা জটিল ধাপ পার করছেন মাত্র!!
ধাপ ৯) সমাধান প্রয়াসী ধাপ৷ ক্রোধানল ধাপ হচ্ছে বিয়ের সবচেয়ে কঠিন ধাপ। এই ধাপে অনেকেই তাদের সম্পর্ক টিকে রাখতে পারে না। আর টিকে থাকলেও সম্পর্কে এমন স্থায়ী কোন দাগ বা ক্ষত সৃষ্টি হয় যা সারাজীবনেও ঠিক হবার নয়। যাইহোক, এই ধাপ অনেক জটিল। কিন্তু এই জটিল ধাপের পর শুরু হয় সমাধান প্রয়াসী ধাপ। এই ধাপে স্বামী স্ত্রী উভয়েই বিয়ের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে শুরু করে। মানুষের দুর্বল দিক থাকা স্বাভাবিক এটা তারা বুঝতে শুরু করে। রাগ এবং গোয়ার্তুমি করে যে এই দুর্বলতা দুর করা যায় না সেটাও বুঝতে পারে। সে তখন সমাধান চায়। সমাধানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ও হয়ে যায়। এমনকি সমাধানের লক্ষ্যে একে অপরের দুর্বলতাগুলো মেনে নিতে শুরু করে। সহজ কথায়, নিজেরা মেনে নিতে শুরু করে। স্বামী স্ত্রী এই ধাপে আসে, তখন তারা উপলব্ধি করতে পারে যে, প্রত্যেকের দুর্বলতা তার সত্ত্বারই একটি অংশ। এটা তার জন্মগত ফিতরাত যা আসলে সহসাই বদলে ফেলা অসম্ভব। কাজেই এ পর্যায়ে উভয়ে তাদের রাগ, হতাশাকে দুরে ঠেলে দেয়। ঝগড়া, বিবাদ বাদ দিয়ে সহজভাবে মেনে নিতে পারে। একে অপরকে ভাল মন্দ সবকিছু নিয়েই ভালবাসতে শুরু করে।
ধাপ ১০) স্থিরতার ধাপ৷ এটা হল গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নিজেদের ছেলে মেয় বড় হয়ে যায়৷ এই ধাপে দুজন দুজনার সমস্ত দোষ, দুর্বলতাকে একপাশে সরিয়ে একে অপরকে অন্তর দিয়ে ভালবাসতে শুরু করে। এজন্য কোন রকম যুক্তি বুদ্ধির আশ্রয় নেয় না। স্রেফ ভালবাসে। উপভোগ করে। অনেকদিন ধরে সংসার করার কারণে একজন আরেকজনের ভাললাগা, চাওয়া বুঝে ফেলে। মানসিক, শারীরিক এবং আত্মিকভাবে দুজন দুজনের সাথে পুনঃসংযুক্ত হয়। এটাই আসল ভালবাসা। বিয়ের প্রথম প্রহরের ন্যায় আবারো হানিমুন পিরিয়ডের আবির্ভাব ঘটে। এ পর্যায়ে, দম্পতির সামনে যত চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, দুজনে মিলে সাহস ও ভালবাসার সাথে মোকাবেলা করে। এ ধাপটি কিছুটা দীর্ঘ হয়, এবং এটাই কাম্য৷
ধাপ ১১) অবসরের ধাপ৷ সন্তান সন্ততি বড় হয়৷ মেয়েদের বিয়ে হয়ে শ্বশুরালয়ে চলে যায় পিত্রালয় শূন্য করে৷ ছেলেকে বিয়ে করান৷ ঘরে পুত্রবধু আসে, নতুন নাতি নাতনির জন্ম হয়৷ স্বামী/স্ত্রী চাকুরি থেকে অবসরের সময় ঘনিয়ে আসে৷ পরিবারে পুত্রদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ নিজেদের প্রভাব কমতে থাকে৷ স্বামী স্ত্রী তার পুত্র ও পুত্রবধুর মাঝে নিজের ফেলে আসা প্রাথমিক দাম্পত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান৷ (যে সময়ে পুত্র কন্যা থাকে ৬ষ্ঠ ধাপে৷ তারা সন্তান লাভে পিতা মাতার কষ্টের কথা অনুভব করে৷ আর পিতা মাতা স্মরণ করে তাদের ত্রিশ বছর আগের হানিমুন প্রিয়ডের কথা৷) এ ধাপে স্বামী স্ত্রী পরস্পরের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে৷
ধাপ ১২) চরম অসহায়ত্বের ধাপ৷ দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তারা এখন বৃদ্ধ৷ পৃথিবীর অামোঘ নিয়মে মানুষের মৃত্যু অবধারিত৷ কিন্তু দু জনের মৃত্যু এক সাথে হয় না৷ একজন আগে যাবেই৷ দাম্পত্য জীবনের সবচাইতে অসহায় সময় এই সঙ্গীহারা সময়টি৷ হারানো সঙ্গী যতোই খারাপ হউক তাকে মনে পড়ে বারবার৷ নিরব অশ্রুঝরে যা কেউ বুঝতে পারে না৷ এ সময়ে সন্তানরা পিতা মাতাকে বুঝতে চায় না৷ কারণ সন্তানেরা তাদের অতীত (শিশুকাল) দেখে নিজের সন্তানের মাঝে, কিন্তু অগ্রিম নিজেদের বার্ধক্য দেখার সুযোগতো নেই৷ অনেকে এ বৃদ্ধ/বৃদ্ধার উপর বিরক্ত হয়৷ আর সেসব দেখে এ অসহায় মানুষগুলো তার সোনালী অতীতের কথা রোমন্থন করেন আর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়৷ দীর্ঘশ্বাস তাদের সঙ্গী হয়৷ তারা কামনা করে যত তাড়াতাড়ি মৃত্য হয় তত ভালো৷
নির্ঝঞ্ঝাট দাম্পত্য জীবন বলে আসলে কিছু নেই। এ ধরনের জীবন শুধু গল্প উপন্যাসেই পাওয়া যায়। পরিবার হচ্ছে সরল অংকের মতো জটিল সমীকরণের একটি বিষয়৷ বিবাহিত জীবনে সমস্যা আসবেই। কারণ প্রত্যেক মানব সম্পর্ক বিভিন্ন অমসৃণ ধাপের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয়। এটা ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে যে, সে এটাকে ভাঙ্গবে, নাকি গড়বে। প্রত্যেকে প্রত্যেককে ছাড় দিতে হয়৷ উদারতা দেখাতে হয়৷ পরস্পর আস্থা বিশ্বাস রাখতে হয়৷ নীতি নৈতিকতার ভিত্তির উপর পরিবার গড়তে হয়৷ সর্বোপরি আল্লাহর উপর ভরসা করতে হয়৷
বি.দ্র. এগুলো নিজের জীবন, বন্ধু বান্ধবীদের জীবন, আত্মীয় ও প্রতিবেশিদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখা ও অবলোকন করা থেকে লিখেছি৷ আপনার সাথে কিছু অংশ মিলে যেতেও পারে৷ আবার আপনি হয়তো নতুন কিছু অবলোকন করতে পারেন যেটা আমার লেখায় আসেনি৷ সে রকম কিছু থাকলে মন্তব্যে লিখবেন৷ আমি পরবর্তীতে সেসব সংযুক্ত করে নেবো৷ আপনি এ লেখার কোন অংশের সাথে যৌক্তিকভাবে দ্বিমতও করতে পারেন৷ কারণ মানব জীবন বৈচিত্রময়৷ সবার সাথে সবটুকু মিলবে না এটাই স্বাভাবিক৷
আপনি কোন ধাপে আছেন অবশ্যই জানাবেন৷ আর লেখাটি কেমন লাগলো তা লিখতে কার্পণ্য করবেন না৷
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.